মোদী সরকারের বাংলাদেশ নীতিতে পরিবর্তন
মে ২০, ২০১৫
আমীর খসরু
ভারতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারকে বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে বিজেপি সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই ওই নতুন সরকার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে নতুন মনোভাব পোষণ এবং দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ শুরু করে। অবশ্য এটা যে হঠাৎ করেই ঘটেছে বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়েছে তা নয় - বরং তারা ক্ষমতায় আসার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে যে হোমওয়ার্ক করছিলেন, সে সময়েই তাদের বিদেশ নীতির ব্যাপারে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। এটি অবশ্য ভারতের ওই সময়ে বিদ্যমান বা বহুদিন ধরে চর্চা ও মান্যকারী নীতির বলতে গেলে ঠিক উল্টোটাই। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বেশ শীতল সম্পর্ক উষ্ণতার মাত্রায় নিয়ে যাওয়া, পাকিস্তানসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলো সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন এবং ভারত মহাসাগরকেন্দ্রীক নতুন চিন্তা-ভাবনা। এটা বললে ভুল হবে না যে, ভারতের ধনীক শ্রেণীর প্রতিনিধি এবং প্রশাসনের একাংশ সরাসরি নতুন এই পথ গ্রহণে আগ্রহী ছিল এবং তাদের উদ্দেশ্য ছিল - অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আরো উদারনীতি গ্রহন, নিত্যনতুন বাজার দখল, ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তার এবং বিশ্ব শক্তি হিসেবে সর্বাত্মকভাবে আবির্ভাবের চিন্তা। আর এসব চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে আছেন এবং ছিলেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী, তার পরামর্শক দল এবং বিজেপি। এ কারণে ড. মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগের ‘আধা খোলা রাখা নীতি’ পরিবর্তে মুক্ত বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের অর্থনীতিকে পুরো মাত্রায় উদার করার নীতি গ্রহণ করা হয়। নানা বিরোধীতা সত্ত্বেও পাকিস্তানের সাথে নরেন্দ্র মোদী প্রথম দিন থেকেই সম্পর্কের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখার চেষ্টা করেন। শক্তিধর দেশ হিসেবে ভারত মহাসাগরের মালদ্বীপ তো বটেই, ছোট-খাটো কতোগুলো দ্বীপ রাষ্ট্রও ঘুরে এসেছেন মোদী। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রথম দিন থেকেই সুসম্পর্কের সূচনা হয়। যদিও এক্ষেত্রে তারা তাদের হোমওয়ার্ক এবং কর্মকাণ্ড শুরু করেন অন্তত বছর দু’য়েক আগে। ওয়াশিংটনের কর্তাব্যক্তিদের সাথে সুসম্পর্ক সৃষ্টি এবং সেখানকার পন্ডিত, চিন্তাবিদ এবং বিশেষজ্ঞদের (মূলত থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সমূহ) সাথে খোলামেলা আলোচনা ও নিজেদের ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা তাদেরকে জানানোর মাধ্যমে এটি শুরু হয়। ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টিকারী, দাঙ্গার উস্কানিদাতা হিসেবে নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপির ব্যাপারে যে স্পর্শকাতর মনোভাব পশ্চিমী দুনিয়া, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ছিল তাও তারা দূর করার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান এবং অনেক ক্ষেত্রেই সফলও হন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী শপথ নেয়ার ৮ মাসের মাথায়ই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ভারত সফর করেন। প্রেসিডেন্ট ওবামার সাথে ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারী। এর আগে নরেন্দ্র মোদীও যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন এবং সফরটি বেশ সফলও হয়েছিল।
পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ব্যাপারে বিজেপির দৃষ্টিভঙ্গির যে পরিবর্তন হয়েছে এমন একটা বার্তা তারা আগে থেকেই দিয়ে রেখেছিলেন। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের সরকার এবং ওই সব দেশের ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর সাথে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা চালানো হয়। ক্ষমতা গ্রহণের পর নরেন্দ্র মোদী দক্ষিণ এশিয়ার অর্থাৎ সার্কভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ দিয়ে তাক লাগিয়ে দেন।
ক্ষমতা গ্রহণের কয়েকদিন পরে তিনি প্রথমে ভুটান সফর করেন। কেন ভুটান প্রথম দেশ হবে সফরের জন্য সে সম্পর্কেও সবার ছিল কৌতূহল। কিন্তু মূল কথা হচ্ছে - ভুটানের সাথে সাম্প্রতিককালে চীনের সখ্যতা বৃদ্ধি,চীনা অর্থ সাহায্যে ওই দেশের সড়ক, যোগাযোগসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ এবং ওই দেশের তরুণদের মধ্যে প্রবল ভারতবিরোধী মনোভাব। অবশ্য জলবিদ্যুৎ আমদানি নিয়েও নরেন্দ্র মোদী সফরের সময় বিস্তারিত কথা বলেছিলেন। এরপরে তিনি গেলেন নেপাল। অর্থাৎ যে নেপালে দেখা গেছে প্রবল ভারতবিরোধী মনোভাব - তা প্রশমনসহ রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে তিনি ওই দেশটি সফর করলেন। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের ব্যাপারে যথেষ্ট অগ্রগতি হওয়ার পরেও অতীতের মতো যথারীতি তা থমকে গেছে। যদিও আগের কংগ্রেস সরকারের মতো তা তিক্ততায় রূপ নেয়নি। শ্রীলংকার সরকার বদলের সাথে সাথে চীনঘেষা রাজাপাক্ষের বিদায়ে সম্পূর্ণভাবে চীনের অর্থ এবং কারিগরি সাহায্যে নির্মিত শ্রীলংকার হাম্মানতোতা সমুদ্র বন্দরের কর্তৃত্ব নিয়ে জোর লড়াইয়ে পরিস্থিতি এখন ভারতের দিকেই। নরেন্দ্র মোদী সরকার শ্রীলংকার দিকেও তীক্ষ্ণ নজর রাখছে।
বাংলাদেশ প্রশ্নে শুধুমাত্র বিজেপি কেনো, ওই রাষ্ট্রের তাবৎ নীতি-নির্ধারক, বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী মহলসহ সংশ্লিষ্টদের রয়েছে বিশাল আগ্রহ। এই আগ্রহের কারণ যতোটা বন্ধুত্বের, তার চেয়েও অনেক বেশি স্বার্থের। এই স্বার্থের পেছনে ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত দিক যেমন রয়েছে,তেমনি ব্যবসা-বানিজ্যসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্বার্থও জড়িত। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে দিকটি, তা হচ্ছে - ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য মূলত বাংলাদেশবেষ্টিত। ভূ-বেষ্টিত বা ‘ল্যান্ড লকড’ দেশ না হলেও কার্যত তার কাছাকাছি। এছাড়া ওই সাত রাজ্যের সাথে তথাকথিত ট্রানজিটের নামে সড়ক, রেল, নৌ, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগসহ সামগ্রিকভাবেই বাংলাদেশ অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। এছাড়া রয়েছে চীন। ওই সাত রাজ্যসহ ভারত সীমান্তে বিশাল এক অংশ জুড়ে রয়েছে চীন। সাত রাজ্যের একটি অরুনাচল নিয়ে ভারত-চীন বৈরিতা কয়েক দশকের। এছাড়া চীনের সাথে সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশ যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান তাও স্পষ্ট। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী বার্মা। বার্মার সাথেও ভারতের সাত রাজ্যের দু’একটি রাজ্যের চলাচলের যোগাযোগ থাকলেও উন্নত সড়ক বা যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো গড়ে উঠেনি, তবে চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে - ভারত মহাসাগর। বঙ্গোপসাগর দিয়ে ভারত মহাসাগরের সাথে প্রাকৃতিকভাবে যোগাযোগের যে সুযোগ বাংলাদেশের রয়েছে তা বাংলাদেশের জন্য ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সমুদ্র নির্ভর অর্থনীতি ও যোগাযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।
চট্টগ্রাম সংলগ্ন বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে চলছে প্রতিযোগিতা। বন্দর নির্মাণ নিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সাথে চীনের খুবই একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। চীন এ কারণে বিতর্কিত,নজিরবিহীন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে সবার বিপরীতে গিয়ে সমর্থনও জানিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরকালে যখন চীনের সাথে গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে চুক্তি সই হওয়ার চূড়ান্ত মুহূর্ত, ঠিক সে সময়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনকে জানিয়ে দেয়া হয় - বন্দর নির্মাণের সব খরচাপাতি এবং কারিগরি সহায়তা চীনের হলেও ভারত এতে সমান সুযোগ ও কর্তৃত্ব পাবে। এরপরে আর চুক্তি হলো না এবং সাথে সাথে চীনের সাথেও সম্পর্কের শীতলতা দেখা দিতে থাকে। সুসম্পর্কের ইতি ঘটলেও বর্তমানে ভিন্নভাবে একটি কার্যকরী সম্পর্ক ওই দেশটির সাথে রয়েছে।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সময়ে ভারতে ছিল কংগ্রেস সরকার। নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ তাবৎ পশ্চিমী দুনিয়া এবং অন্যান্য প্রভাবশালী দেশ সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন চাইলেও ভারতের তৎকালীন কংগ্রেস সরকার এক্ষেত্রে নানা অজুহাত সৃষ্টি করে। এই মতপার্থক্য ঘোচাতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতীয় কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক দিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয় - যা দিল্লী বৈঠক নামে খ্যাত। ওই বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়, বাংলাদেশ প্রশ্নে যা কিছু তা ভারত দেখবে, কারণ এখানে ভারতের স্বার্থ জড়িত রয়েছে।
কিন্তু ততোদিনে ক্ষমতায় আসার জন্য প্রস্তুত এবং উদগ্রীব তৎকালীন বিরোধী দল বিজেপি কংগ্রেস সরকারের ওই মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি পছন্দ করেনি। তারা বিকল্প পথে বাংলাদেশের বিরোধী পক্ষকে জানিয়ে দেয় যে,তারা ক্ষমতায় ফিরে এলে সবকিছু ঘুরে যাবে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, এমনটা মনে করা হয় এবং এটা সত্যও যে, আওয়ামী লীগের সাথে ভারতীয় কংগ্রেসের একটি সুগভীর সখ্যতা ও সুসম্পর্ক রয়েছে বরাবরই। বিজেপি’র নীতি-নির্ধারকরা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে-পড়ে এ কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, বিজেপি বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক তা চায়। যুক্তি হিসেবে বিজেপি তখন এমন ধারণা পোষণ করতো যে, কোনো একটি বিশেষ দলের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষার অর্থ আসলে এক বিশাল জনগোষ্ঠীর বিরাগভাজন হওয়া। তাছাড়া কংগ্রেসের কারণে ওই সময় আওয়ামী লীগকে তারা সম্পূর্ণ ভিন্নভাবেই মূল্যায়ন করতো। বিজেপি’র ধারণা ছিল, বিশেষ একটি দলের সাথে ভারত সরকারের সম্পর্কোন্নয়নের কারণে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব ক্রমশ চাঙ্গা হবে এবং হচ্ছে। তারা এমনটাও ভাবতো যে, প্রবল ভারতবিরোধী মনোভাবের কারণে ইতোমধ্যে সম্পাদিত চুক্তিসমূহ এবং ভবিষ্যতে যে সুযোগ-সুবিধা ভারত পেতে পারে তা বিঘ্নিত হতে পারে। তারা হিসাব করছিল বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের অতীত দিনগুলো নিয়েও। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরই ২৫ বছর মেয়াদী মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি, বাণিজ্য চুক্তিসহ যে সব বড় বড় চুক্তি হয়েছিল তা সরকার পরিবর্তনের পরে অল্পকালেই অকার্যকর হয়ে যায়।
এছাড়া বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের প্রশ্নটিতো রয়েছেই। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ,সন্ত্রাসবাদ বা যেকোনো ধরনের চরমপন্থা বিস্তৃত হলে ভারতই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ সব হিসাব-নিকাশের পরে নির্বাচনোত্তর সময়ে নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ ছাড়া সার্কভুক্ত দেশগুলো সরকার প্রধানদের কাছে তৎক্ষণাত টুইট বার্তা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই সতর্ক। বিজেপি তখনো বিশ্বাস করতো - বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন হওয়া উচিত, বাংলাদেশসহ সবারই স্বার্থে। এমন কথা তখন বিজেপির নীতি-নির্ধারক মহল থেকেও বলা হতে থাকে এবং অনেকটা প্রকাশ্যে।
বিএনপির সাথে ওই সময় বিজেপির একটি বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হয় এবং যোগাযোগও চলতে থাকে। এ সম্পর্ক ভারতের নির্বাচনের পরেও বেশ কয়েকদিন বিদ্যমান ছিল। আর এসব আনন্দেই বিএনপি ভারতীয় বিজেপির নির্বাচনী বিজয়ে এমন আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করতে থাকে, যা কোনো অংশে বিজেপি’র নেতা-সমর্থকদের চেয়ে কম নয়।
সরকার প্রধান হিসেবে নরেন্দ্র মোদী এবং তার সরকারের অধিকাংশই বাংলাদেশ সম্পর্কে পশ্চিমী দুনিয়ার মনোভাবের প্রায় সমার্থক মনোভাব পোষণ করতেন। অবশ্য ভারতীয় প্রশাসন এবং অন্যান্য সংস্থার - যারা নিজেদের কার্যকর ভূমিকা পালনকারী এবং মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা অনুধাবনকারী হিসেবে দাবি করে, বাংলাদেশ পশ্নে বিজেপি বা এর সরকারের সাথে তাদের অবশ্য প্রবল দ্বিমত ছিল এবং এখনো আছে। বাংলাদেশ প্রশ্নে এদের পক্ষ থেকে ভারতীয় স্বার্থ যেমন যোগাযোগ,যাতায়াত ব্যবস্থাসহ ট্রানজিটের নামে নানাবিধ করিডোর এবং ভারত মহাসাগরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলকে সংযুক্তকরণ, চীন প্রসঙ্গ, নানাবিধ অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার কথা যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হতে থাকে। এক্ষেত্রে তারা বিদ্যমান সরকারই তাদের জন্য সহায়ক বলে মতামত দেয়। আর বাংলাদেশর বর্তমান সরকারের দিক থেকেও ‘অতীতের মতো সুসম্পর্ক বজায় রাখার’ কথা জানিয়ে দেয়া হয় নানা মাধ্যমে।
এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় মোদী সরকার তাদের বাংলাদেশ নীতিতে একটি পরিবর্তন এনেছে এবং এটি ক্রমাগত বড় আকারের পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে। বিজেপি সরকারের জন্য ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ অন্যান্য বিষয় আগে যতোটা অস্বস্তির কারণ ছিল, বর্তমানে আর তেমনটি নেই বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পরবর্তী পর্যায় নিয়ে বিজেপি’র দলীয় এবং সরকারের যে মনোভাব অর্থাৎ যতোটা শিগগিরই সম্ভব সবার অংশগ্রহণে নতুন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আগে যতোটা তাড়াহুড়ো ছিল,তেমনটাও এখন আর শোনা যায় না। তবে সব দলের অংশগ্রহণে হলেও ভারতের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে - এমন নিশ্চয়তা আছে, এমন একটি সরকারের ব্যাপারেই তাদের এখন আগ্রহ। কংগ্রেস সরকারের সময়ের বহুনীতির আমূল পরিবর্তন করলেও বিজেপি বাংলাদেশ নীতির ক্ষেত্রে তেমনটি করতে এখন আর রাজি নয়। তবে যা হয়েছে তাহলো - কংগ্রেস তাদের রাজনৈতিক আচার-আচরণে, কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ছিল ঔদ্ধত্যপূর্ণ। পক্ষান্তরে বিজেপি এক্ষেত্রে অনেকটা নমনীয়। তবে জাতীয় স্বার্থ আদায়ে দু’পক্ষের মধ্যে কোনোই পার্থক্য নেই।
ভারতের পররাষ্ট্রনীতি বা বিদেশনীতির মূল কথা হলো - নিজ দেশীয় স্বার্থকে সবার উপরে প্রাধান্য দেয়া। মোদী সরকার স্বাভাবিক কারণেই ওই নীতির বিপক্ষে যেতে পারেননি, পারবেও না, চিন্তাও করবেনা।
কিন্তু নরেন্দ্র মোদী একেবারে খালি হাতে মধুর কথাটি বলতে নারাজ। আর এ কারণেই বাংলাদেশে আসার আগে ‘কিছু প্রাপ্তির ঝুড়ি’ নিয়ে তিনি আসবেন - তা পরবর্তীকালে বাস্তবায়িত হোক বা না-ই হোক।।
No comments:
Post a Comment