Sustain Humanity


Sunday, May 17, 2015

টেন্ডার বাণিজ্যে এমপি নেতারা

টেন্ডার বাণিজ্যে এমপি নেতারা

টেন্ডার বাণিজ্যের সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে পড়ছেন সরকারি দলের এমপি ও জেলা-উপজেলার নেতারা। ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দল-উপদল, কোন্দলও হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। এমনকি হানাহানি ও সংঘাত এবং খুনাখুনির ঘটনাও ঘটছে। সর্বক্ষেত্রে ই-টেন্ডার চালু না হওয়ায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সমস্যা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সরকারি দলের এই অভ্যন্তরীণ বিরোধের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে টেন্ডার বা বিভিন্ন বৈধ-অবৈধ বাণিজ্য। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত হয় চাঁদাবাজির ভাগাভাগি নিয়ে। 
জানা গেছে, দেশের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন কাজ হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, গণপূর্ত বিভাগসহ সরকারি বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কাজের নিয়ন্ত্রণ নিতে কোনো রকম রাখঢাক না রেখেই সরকারি দলের মাঠপর্যায়ে প্রভাবশালী নেতারা এবং তাদের অনুসারীরা দাপট খাটান। শুধু তাই নয়, তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তার পক্ষেই অবস্থান নেওয়া সম্ভব নয়।
জানা গেছে, ঢাকা সিটি করপোরেশনের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন নির্দিষ্টসংখ্যক যুবলীগ নেতা। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কাজসহ সব ধরনের কাজ নিয়ন্ত্রিত হয়। সিটি করপোরেশনের এমন কোনো কাজ নেই যেখানে এই নেতারা হস্তক্ষেপ করেন না। চিহ্নিত এই যুবলীগ নেতাদের নিয়ে রীতিমতো ঝামেলায় আছেন দুই সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত দুই নগর পিতা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই যুবলীগ নেতাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে নগর ভবনকে উদ্ধার করা না গেলে কোনোভাবেই স্বাভাবিক কাজ করতে পারবেন না দুই নগর পিতা। 
রাজধানীর বাইরে জেলায় জেলায় গড়ে উঠেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের অপ্রতিরোধ্য সিন্ডিকেট। ঝিনাইদহে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে গড়ে তুলেছেন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। আবার তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগ যৌথভাবে গড়ে তুলেছেন আরেকটি সিন্ডিকেট। এই দুই সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করে জেলার সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের টেন্ডার। জানা গেছে, এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মাঝে মাঝেই সহিংস ঘটনা ঘটে। প্রায় একই চিত্র কুমিল্লা জেলা ও সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ঘিরে। এখানে অবশ্য জেলার সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের টেন্ডার এককভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।
জানা গেছে, টেন্ডারকে ঘিরে সরকারের গত মেয়াদে এ ধরনের পরিস্থিতি অনেক বেশি ছিল। ওই সময়ে টেন্ডারবাজি নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই সহিংস ঘটনা ঘটত। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর কিছুটা পরিবর্তন আসে এই চিত্রে। তবে সেটি বেশি দিন টিকেনি। প্রথম দিকে এসব বিষয় সরকারের যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ক্রমান্বয়ে পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন জেলায় সহিংস ঘটনা ঘটছে। আর এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে রীতিমতো বেকায়দায় সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের বিভিন্ন এলাকায় টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারি দলের একাধিক গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ালে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, যে গ্রুপ শক্তিশালী আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সেই গ্রুপের পক্ষাবলম্বন করে। এতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, টেন্ডারের সঙ্গে আমাদের দলের কেউ জড়িত আছে বলে জানা নেই। যদি এরকম কোনো তথ্য আমরা পাই তাহলে অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ই-টেন্ডার চালু স্বল্প পরিসরে : বিগত মহাজোট সরকারের প্রথম দিকেই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, টেন্ডারবাজি এবং টেন্ডারকে ঘিরে সব ধরনের সহিংসতা বন্ধে সর্বক্ষেত্রে ই-টেন্ডার ব্যবস্থা চালু করা হবে। তারপর এ নিয়ে কাজও শুরু করে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রথম দিকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা। পরবর্তীতে বিগত কয়েক বছরে সরকারের অন্তত ১৭ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দফতরে কেনাকাটা ও উন্নয়ন কাজের দরপত্র বা টেন্ডার আহ্বান করা হয় ই-টেন্ডারের মাধ্যমে। তবে সমস্যা অন্য জায়গায়, ই-টেন্ডার চালু হলেও তা হয়েছে সীমিত আকারে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে ১৭টি মন্ত্রণালয়ের অধীন পানি উন্নয়ন বোর্ড, গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদফতর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সড়ক বিভাগ, ওয়াসা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দফতরের ৫০ কোটি টাকার নিচের কেনাকাটা ও উন্নয়ন কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয় ই-টেন্ডারের মাধ্যমে। সূত্র জানায়, ই-টেন্ডার বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকায় অর্থাৎ যারা ই-টেন্ডারে অংশ নেবেন, যারা এ কাজ করবেন তাদের অনভিজ্ঞতার কারণে পুরোদমে সর্বক্ষেত্রে ই-টেন্ডার ব্যবস্থা চালু করা যাচ্ছে না।এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির ঘটনা আগেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। তবে সরকার ইচ্ছা করলে টেন্ডারবাজি নিয়ে ঘটা সহিংসতা, চাঁদাবাজি একদিনেই বন্ধ করে দিতে পারে। নিজেদের নেতা-কর্মীদের খুশি রাখার জন্য সরকার টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ঠেকানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নানা উদ্যোগের কথা তারা বললেও বাস্তবে কিছুই করছে না।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো এখন রাজনীতিকেন্দ্রিক না হয়ে ক্ষমতাকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। তারা মনে করেন, ক্ষমতায় থাকলে সম্পদ বাড়ানো যাবে। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের বালাই নেই। আমাদের দেশের দলগুলো রাজনীতিকে সম্পদ আহরণের উপায় হিসেবে মনে করে। ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে সম্পদ বাড়াতে আগ্রহ দেখা যায়। তিনি বলেন, যখন কেউ কম পান আর কেউ বেশি পান তখন তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। টেন্ডারবাজি বন্ধে ই-টেন্ডার পদ্ধতি ‘পরীক্ষামূলক’ই রয়ে গেছে। প্রযুক্তিগত দুর্বলতা ও যারা এসব পরিচালনা করবেন তাদের সক্ষমতার অভাবেই এ প্রক্রিয়া আটকে আছে।

http://www.bd-pratidin.com/lead-news/2015/05/18/81915

No comments:

Post a Comment