Sustain Humanity


Wednesday, May 20, 2015

Perfect PagalDaud! Made Race! দেশী শিল্প ধ্বংস করে , মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে,আত্মঘাতী প্রক্রিয়ায় চলছে দেশ!

Perfect Pagal Daud! Made Race!

মোজাম্মেল খান mojammel1382@gmail.com


দেশী শিল্প ধ্বংস করে , মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে,আত্মঘাতী প্রক্রিয়ায় চলছে দেশ!

দেশী শিল্প  ধ্বংস করে , মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে,আত্মঘাতী প্রক্রিয়ায় চলছে দেশ!


বিগত ২০০৭-০৮ সালে ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ব্যবসায়ীদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়। অনেককেই কর ফাঁকির অভিযোগে জেলে পাঠানো হয়। জেল থেকে বাঁচতে অনেকেই আত্মগোপনে যায়। ফলে ২০০৭ ও ২০০৮ এই দুই বছর ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়ের দিকে মনোযোগ দেয়ার পরিবর্তে নিজেদের রক্ষায় ব্যস্ত ছিলো। ফলে ওই সময় বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। উদ্যোক্তারা ধরেই নিয়েছিলো, রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে ব্যবসায়-বাণিজ্য উন্নতি হবে। কিন্তু ২০০৯ সালে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসে সঙ্কটের কথা বলে নতুন করে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়। দুই বছর পর শর্তসাপেক্ষে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করলেও গ্যাস সংযোগ আজো পুরোপুরি চালু হয়নি। এর বাইরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কারণে ব্যবসায়ীরা নতুন করে বিনিয়োগে আস্থা পায়নি। সেই সাথে ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ঋণ নেয়ায় বেসরকারি খাতে সুদ ব্যয় ছিল চড়া। এদিকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে নির্বাচনের পর থেকে রাজনৈতিক সহিংসতায় ও রাজনৈতিক গোলযোগে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগে আরো নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে না পারলে বিনিয়োগ স্থবিরতা দীর্ঘস্থায়ীতেই রূপ নেবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ‘এশিয়ার টাইগার’ হিসেবে খ্যাত মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও তাইওয়ানের অর্থনৈতিক উত্থানের পেছনে কাজ করেছে দেশীয় বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়ার নীতি। এসব দেশ আমদানি বিকল্প খাতে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের নানা সহায়তায় বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে ধনী দেশগুলোর প্রায় সমান কাতারে নিয়ে যায়, বৈশ্বিক অর্থনীতিবিদদের কাছে যা ‘এশিয়ান মিরাকল’ নামে পরিচিত। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যায় তার উল্টো চিত্র। নানা ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করা শিল্পপতিদের চেয়ে বাড়তি সুবিধা ভোগ করছে একই পণ্যের আমদানিকারকরা। এতে দেশী শিল্প যেমন ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি আমদানি প্রাচুর্যের কারণে খরচ হচ্ছে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা। আবার এদেশে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে হয় বিনিয়োগ করতে গিয়ে, আর বিদেশীদের জন্য নিশ্চিত করা হয় নানা সুবিধা।
দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা এই ‘বৈষম্যমূলক’ নীতির সমালোচনা করেছে বিশ্লেষকরা। কারণ দেশের শিল্পপতিরা বিনিয়োগের পর সেখান থেকে যে মুনাফা পায়, তা আবারো বিনিয়োগ করে দেশের মাটিতেই। ফলে জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে শিল্পের বিকাশ, উৎপাদন, প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান। অন্যদিকে নানা সুবিধায় মোড়ানো ইনকিউবেটরে স্থাপিত বিদেশী বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা আসে, তার বড় অংশই চলে যায় বিদেশে। কিন্তু দেশে বিনিয়োগ হলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি হয়।
উৎপাদন বাড়ায়, জিডিপি’র প্রবৃদ্ধিও বাড়ে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশীয় উদ্যোক্তাদেরই বেশি সুযোগ-সুবিধা দেয়া উচিত। সব দেশেই স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের অগ্রাধিকার দেয়ার নীতি অনুসরণ করা হয়। কারণ স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়লে তাতে কোনো ঝুঁকি তৈরি হয় না। বিদেশীদের ক্ষেত্রে সে ঝুঁকি থাকে। অতীতে দেখা গেছে, কোনো দেশ থেকে হঠাৎ করেই বিদেশী বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। তখন ওই দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক ধরনের শূন্যতা দেখা যায়। তাই কোনো কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারী তার পুঁজি প্রত্যাহার করে নিলে দেশের অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ- উৎপাদনশীল খাত তো বটেই, অনুৎপাদনশীল খাতেও বিদেশী বিনিয়োগ এলে সরকারের পক্ষ থেকে সেখানে দ্রুত গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু দেশের শিল্প মালিকরা বিপুল অর্থ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করে বছরের পর বছর এসব সরবরাহ পায় না। উল্টো বিনিয়োগের পর উৎপাদনে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সেবা পেতে সরকারের দপ্তরগুলোতে গিয়ে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদেরকে হয়রানির শিকার হতে হয় পদে পদে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ভূমির বন্দোবস্ত করতে সরকার ইপিজেড প্রতিষ্ঠা করেছে। অন্যদিকে দেশীয় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের জন্য ব্যক্তিমালিকানাধীন ভূমির উন্নয়ন করতে গিয়েও সরকারের বাধায় তা করতে পারছে না। এতসব বৈষম্যমূলক নীতির পাশাপাশি আরো বড় ফাঁস হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগের পর গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে বছরের পর বছর অচল পড়ে থাকা কারখানার যন্ত্রপাতি একদিকে নষ্ট হয়, অন্যদিকে বাড়তে থাকে ঋণের সুদভার। ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই স্থানীয় উদ্যোক্তাদের খেলাপি হয়ে যেতে হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়, বিনিয়োগ বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলো বিষয়টি জানলেও এর সুরাহায় তাদের কোনো উদ্যোগ নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, দেশীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা প্রকল্প প্রস্তাব নিবন্ধনের সময় থেকেই নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও ঘুষ বাণিজ্যের মুখোমুখি হতে থাকে। কিন্তু বিদেশীদের ক্ষেত্রে এতসব বাধা ও ঝুঁকি নেই। কেউ বিদেশী বিনিয়োগের কথা বললেই সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজ উদ্যোগে সহায়তা করার প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। স্থানীয় উদ্যোক্তারা বলছে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের এই বৈষম্যমূলক নীতির কারণে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের অনেকেই নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। ফলে উৎপাদন, কর্মসংস্থান বাড়ছে না। এতে বেকারত্বের মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে।
বর্তমানে সেবা খাত বাংলাদেশে সবচেয়ে লাভজনক। তবে এর মধ্য বেশি মুনাফা হচ্ছে টেলিযোগাযোগ খাতে। এখানে দেশী উদ্যোক্তাদের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। ফলে সবচেয়ে লাভজনক খাতটি চলে গেছে বিদেশীদের হাতে। ঝুঁকিপূর্ণ ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সরকারের অনুগত কিছু উদ্যোক্তাকে দেয়া হলেও বড় ধরনের কেন্দ্র স্থাপনের সুযোগ দেশী উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে নেই। এগুলোও চলে যাচ্ছে বিদেশীদের হাতে। একই অবস্থা গ্যাস খাতেও। বিদেশী সহায়তা নিয়ে গ্যাস খাতে দেশী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের সক্ষমতা রাখলেও তাদের সেই সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে এগুলো চলে যাচ্ছে কমিশনভিত্তিক ব্যবসায়ী ও বিদেশীদের হাতে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুসারে, কোনো বিদেশী উদ্যোক্তা এককভাবে অথবা যৌথ মালিকানায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে বিনিয়োগ করলে প্রথম দুই বছরের জন্য ১০০ শতাংশ কর অবকাশ, তৃতীয় ও চতুর্থ বছরের জন্য ৫০ শতাংশ এবং পঞ্চম বছরে ২৫ শতাংশ কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হয়। রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল বিভাগ এবং চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় বিনিয়োগ করলে প্রথম তিন বছর ১০০ শতাংশ কর অবকাশ, পরবর্তী তিন বছর ৫০ শতাংশ এবং সপ্তম বছরের জন্য ২৫ শতাংশ কর অবকাশ মেলে। নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতির জন্য প্রথম বছরে ৫০ শতাংশ অবচয় সুবিধা, দ্বিতীয় বছরে ৩০ শতাংশ এবং তৃতীয় বছরে ৩০ শতাংশ অবচয় সুবিধা দেয়া হয়। উৎপাদিত পণ্যের ৮০ শতাংশের বেশি রপ্তানি করলে শুল্কমুক্ত যন্ত্রাংশ আমদানি এবং আলাদা বন্ডেড ওয়্যারহাউজিং সুবিধা আছে। এছাড়া এলসি’র বিপরীতে ৯০ শতাংশ ঋণ এবং রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে কম সুদে ঋণ নেয়ার সুযোগও রয়েছে। ইপিজেডের বাইরে শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানকেও স্থানীয় বাজারে একই শুল্কে ২০ শতাংশ পর্যন্ত পণ্য বিপণনের সুযোগ দেয়া হয়। সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্যে ৫ থেকে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা আছে। এছাড়া বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে ৭৫ হাজার ডলার বিনিয়োগ করলে স্থায়ী আবাসন সুবিধা এবং পাঁচ লাখ ডলার বিনিয়োগ করলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হয়।
এভাবে নানা সুবিধায় বিনিয়োগ করার পর বিপুল পরিমাণ লভ্যাংশ বিদেশীরা নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য মতে, একটি বিদেশী কম্পানি প্রতিবছর ১৪০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিচ্ছে। কিন্তু তাদের শেয়ার মাত্র ১০ শতাংশ। বাকি ৯০ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তাদের হাতে। অর্থাৎ ব্যবসা সম্প্রসারণ না করে, নিজেদের দেশে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে বিদেশী কম্পানিগুলো। এগুলো রিজার্ভ ভেঙেও লভ্যাংশ দেয়। পাশাপাশি বিদেশী উদ্যোক্তাদের ব্যক্তিগত বিনিয়োগের আয়ের কর দেয়ার বিধান না থাকায় প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
স্থানীয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধা ও জটিলতাগুলো অব্যাহত থাকলে দেশীয় শিল্পপতিরা আর বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে না। তারা দেশের বদলে অর্থপাচার করে বিদেশে বিনিয়োগেই উৎসাহিত হবে। অনেক শিল্পপতি অর্থপাচারের মাধ্যমে বেনামে ভারত, মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশে শিল্প-কারখানা ও ভূমিতে বিনিয়োগ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এসব নেতিবাচক পরিস্থিতি দূর করতে হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের শিল্প-প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
অপরদিকে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদের যে হার দেখায়, কার্যকরী সুদহার তারও বেশি। কারণ ব্যাংকগুলো তিন মাস পর পর ঋণের সুদ মূল ঋণের সঙ্গে যোগ করে। ফলে সুদের উপর সুদ বসছে। এতে সুদের হার দাঁড়ায় ২৩ শতাংশ পর্যন্ত। অথচ ভারতসহ পাশের দেশগুলোতেও ব্যাংক ঋণের সুদের হার এর অর্ধেকেরও কম। উচ্চ সুদের কারণে অনেক শিল্পপতিই বিনিয়োগের আগ্রহ ও পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও ঋণ নিতে সাহস পাচ্ছে না। ফলে ব্যাংকে অলস টাকার পাহাড় জমেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে।

No comments:

Post a Comment