Sustain Humanity


Saturday, August 8, 2015

নিলয় হত্যার দায় স্বীকার আল কায়দার

নিলয় হত্যার দায় স্বীকার আল কায়দার


niloy chatterjee-blogger 0808শুক্রবার রাতেই ঢাকার সংবাদপত্র ও সংবাদ চ‍্যানেলগুলিতে ই–মেল পাঠিয়ে আল–কায়দার ভারতীয় উপমহাদেশ সংগঠন এ কিউ আই এস–এর বাংলাদেশ শাখা আনসার আল–ইসলাম নিলয়–হত‍্যার দায় স্বীকার করল। ই–মেল বার্তায় বলা হয়েছে, নাস্তিক, ইসলাম–বিদ্বেষী নিলয় চট্টোপাধ‍্যায়কে তাদের জেহাদিরাই কোতল করেছে। 
-- শুক্রবার দুপুরে ঢাকার গোরান উপনগরীতে ৫ তলার ফ্ল‍্যাটে ঢুকে মুক্তমনা ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ‍্যায় নিলয়কে কুপিয়ে হত‍্যা করে ইসলামি মৌলবাদীরা। নীলাদ্রি ব্লগে নিলয় নীল নামে ধর্মীয় কুসংস্কার ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যুক্তিবাদী লেখালিখির কারণে মৌলবাদীদের হুমকি পাচ্ছিলেন। এর আগে এ বছর একইভাবে খুন হয়েছেন ব্লগার অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্তবিজয় দাস। এই ৩ জনেরও হত‍্যার দায় স্বীকার করেছিল এই আনসার গোষ্ঠী। নিলয়ের স্ত্রী আশামণি শুক্রবার রাতেই খিলগঁাও থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ৪ ঘাতকের নামে এফ আই আর দায়ের করেছেন। তদন্ত চলছে, এখনও কেউ ধরা পড়েনি। নিলয়–হত‍্যায় বড় করে উঠে গেছে এক প্রশ্ন। কথা উঠেছে, ২০১৩ সালে ইসলামি সংগঠনগুলি 'নাস্তিক ব্লগারদের' বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে, তাদের নামের যে তালিকা সরকারকে দিয়েছিল, সেই তালিকা ধরে ধরে খুন করা হচ্ছে। ব্লগারদের তালিকা হাতে থাকা সত্ত্বেও সরকার তাদের নিরাপত্তার কেন ব‍্যবস্থা নিচ্ছে না, উঠেছে প্রশ্ন। ঢাকায় হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্র সূত্রে খবর, ২০১৩ সালে হেফাজত–ই–ইসলামি যে ঢাকা অবরোধের ডাক দিয়েছিল, তার আগে হাসিনা সরকার জোর চেষ্টা চালিয়েছিল রফার, অবরোধ থেকে হেফাজতকে নিবৃত্ত করতে। তখনই হেফাজত ও অন‍্যান‍্য কয়েকটি ইসলামি সংগঠন ব্লগারদের বিরুদ্ধে আইনি ব‍্যবস্থা গ্রহণের দাবি তোলে। ২০১৩–র ১৩ মার্চ সরকার ৯ সদসে‍্যর একটি কমিটি তৈরি করে। কমিটির নাম: পবিত্র ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব‍্যকারী ব্লগার ও ফেসবুক ব‍্যবহারকারীদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব‍্যবস্থা গ্রহণের কমিটি। কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব প্রয়াত মাইনউদ্দিন খোন্দকার। কমিটি আপত্তিকর মন্তব‍্যকারী ব্লগারদের খেঁাজখবর দিতে একটি ই–মেল ঠিকানাও দিয়েছিল। ২০১৩–র মার্চে ওই কমিটি গঠনের পর হেফাজত ও বিভিন্ন মহল থেকে ৮৪ জন ব্লগারের নাম ওই কমিটিতে দেওয়া হয়েছিল। তা থেকে পর্যালোচনা করে ১০ জন ব্লগারের বিরুদ্ধে আইনি ব‍্যবস্থা গ্রহণের জন‍্য আইন–শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে দেয়। গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ৪ জনকে। ওই বছর ৩১ মার্চ আঞ্জুমানে আল বাইইনাত নামের একটি ইসলামি সংগঠন কমিটিকে ৫৬ জন 'নাস্তিকে'র তালিকা দিয়েছিল। এরপর কমিটি ২৭ জনের তালিকা করে। হেফাজত–ই–ইসলাম এতে তুষ্ট হয় না, তাদের আরও দাবিদাওয়া ছিল। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের ঢাকা অবরোধে ৫ লক্ষের বেশি মানুষ জড়ো হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। কড়া হাতে হাসিনা সরকার ওই রাতে রাজধানী ঢাকাকে অবরোধমুক্ত করে। অবরোধের পর ওই কমিটির বৈঠক আর হয়নি। ২০১৩ সালের মার্চের শেষদিনে ওই তালিকা দেওয়া হলেও তার আগেই ওই বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ব্লগার আসিফ মাহিউদ্দিনকে কুপিয়ে মারার চেষ্টা হয়। মাহিউদ্দিন প্রাণে বেঁচে যান। 'নাস্তিক ব্লগার' হিসেবে কারাদণ্ডও হয়েছিল তঁার। পরে জামিন পেয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া ৪ জন ব্লগারই জামিন পেয়েছেন। মাহিউদ্দিন আক্রান্ত হওয়ার পরদিনই ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্লগার রাজীব হায়দার শোভনকে ঢাকায় মিরপুরে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে কোতল করা হয়। এ বছর ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার একুশের বইমেলার গেটে ভিড়ের মধে‍্য ব্লগার অভিজিৎ রায়কে একইভাবে হত‍্যা করা হয়। তঁার নাম ২৭ জনের এই তালিকায় ছিল। তালিকায় নাম না থাকলেও ফেসবুকে লেখালিখির কারণে ঢাকায় এক মাসের মধে‍্য খুন করা হয় ওয়াশিকুর রহমানকে। এ বছর সিলেটে ১২ মে খুন করা হয় অনন্তবিজয় দাশকে। তঁার নাম আঞ্জুমানের তালিকায় ছিল। শুক্রবার ঢাকায় খুন হয়ে যাওয়া নিলয় নীলের নামও তালিকায় ছিল। ২৭ জনের তালিকায় যে ব্লগারদের নাম রয়েছে তাদের অনেকেই প্রাণে বঁাচতে বিদেশে চলে গেছেন। আড়াই মাস আগে নিলয় যখন থানায় তঁার পিছনে মাঝেমাঝেই রহস‍্যময় ব‍্যক্তিদের অনুসরণের অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন, পুলিস সে এফ আই আর নেয়নি। পরামর্শ দিয়েছিল বিদেশে চলে যেতে। খিলগঁাও থানা অবশ‍্য এ ঘটনা আজ অস্বীকার করেছে।

No comments:

Post a Comment