বাঙালি একদা বাণিজ্যে যেত। আজ ভাসানে চলেছে।
গতকাল বিকেলে চন্দননগর হয়ে চুঁচুড়া গিয়েছিলাম। পথ শুনশান। কয়েকটা অটো চলছে। দু-চারটে টোটো। ফাঁকা ফাঁকা। বাস দেখিনি। অন্য গাড়ি দেখেছি অল্প, হাতে গোনা। অস্বাভাবিক থমথমে, ছমছমে। দৃশ্যত হিংসা নেই। তবে টের পাওয়া যায় হিংসার ভয়ঙ্কর গোপন উপস্থিতি। ফিরতে রাত ন'টা হল। এরকম আতঙ্কজনক শান্তি বহুকাল দেখিনি। কোনও গাড়ি না পেয়ে দীর্ঘ পথ একা হাঁটতে হাঁটতে সত্যি ভয় করছিল। বাড়ি ফিরতে পারবো তো। আততায়ীর মতো স্তব্ধতা চারপাশে। এ শহর কি পরিত্যক্ত? জীবনের চিহ্ন নেই। অসামাজিক অপ্রাকৃতিক শক্তির কবলে পড়েছে কি? হঠাৎ চোখে পড়ে ভাসান চলেছে। একটু আলো, কয়েকটা লোক, একটা ঢাক, একটা কাঁসি। নিষ্প্রভ, শোকগ্রস্ত যেন। ১৪৪ ধারার ধাক্কা বাড়ির পুজোর বিসর্জনকে আহত করেছে। এ সময় কোথা থেকে একটা নির্জন অটো এসে আমাকে উদ্ধার করল। চন্দননগরে সাম্প্রদায়িকতা নতুন কিছু নয়। সাবেক এক কংগ্রেসি কাম মার্কসবাদী সুভাষবাদী নেতার কাজকর্মের অনেকটাই ছিল সাম্প্রদায়িক। কিন্তু এখানে এই পরিস্থিতিতে আগে পড়িনি। আরও কিছু অপেক্ষা করছিল। ভদ্রেশ্বরে পৌঁছতেই দেখি অতি-তুমুল ভাসানযাত্রা। আগুনের মতো আলো। বিকট শব্দে ডিস্কো জকি। হৃদপিণ্ড কেঁপে ওঠে, স্নায়ুতন্ত্র কেঁপে ওঠে, গর্ভস্থ শিশু যন্ত্রণায় কাঁপে। শয়ে শয়ে পুরুষ ও মহিলা। নাচছে। ঘোরগ্রস্ত যেন। চারদিকে মদগন্ধ কামগন্ধ লিঙ্গগন্ধ যোনিগন্ধ ইতরগন্ধ। কোথাও বাংলা উচ্চারণ নেই। যা আছে বটতলার গর্ভস্রাব। যৌন লদগালদির এমন যৌথ জ্যান্ত দৃশ্য জীবনে দেখিনি। চরম অসভ্য কুৎসিত কদর্য। ভাদ্রকুকুরকামও লজ্জা পাবে। আমরা এ রকম হলাম কবে? এ কি আমরা? নাকি হিন্দিওলা ঔরসের বিকলাঙ্গ জীব। বাংলার সোশ্যাল ফেব্রিক ভেঙে তছনচ হয়ে গেছে। বাঙালির ভালো স্কুল নেই হাসপাতাল নেই মাঠ নেই জলাভূমি নেই গান নেই গানের গলা নেই সিনেমা নেই শিক্ষিত আড্ডা নেই লাইব্রেরি নেই স্বাস্থ্যকর ঘরবাড়ি নেই বাঙালির চাকরি নেই ব্যবসা নেই স্বপ্ন নেই। একদিন অনেক কিছুই ছিল। সব গেছে। বাঙালি ভাসানে চলেছে। বাঙালি একদা বাণিজ্যে যেত। আজ ভাসানে চলেছে।
No comments:
Post a Comment