অঙ্ক দৌড় প্রতিযোগিতা ও গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা দীক্ষা
===============================
একবার প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন আমি আমাদের কোম্পানিরই একটা চা বাগানে গিয়েছিলাম I চা বাগানে প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বাগানবাসী ছেলে-মেয়েদের জন্য নানা ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করা হয়েছে I বিভিন্ন খেলাধুলার মধ্যে একটি খেলা হচ্ছে অঙ্ক দৌড় প্রতিযোগিতা I এই খেলার নিয়ম হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেনীর প্রতিযোগীদের উপযোগী দুই/তিন সারির যোগ অঙ্ক ছোট ছোট কাগজে লিখে প্রত্যেক প্রতিযোগীর হাতে দেওয়া হবে I প্রতিযোগীদের মধ্যে যে অঙ্কটি শুদ্ধ করে দৌড়ে মাঠের অপর প্রান্তে দন্ডায়মান বিচারকের কাছে পৌছতে পারবে, সে-ই হবে প্রথম, তারপর যে পৌছাবে সে দ্বিতীয় আর তারপর তৃতীয় I এ ভাবেই প্রতিযোগীদের মান নির্ণয় করে পুরস্কার বিতরণ করা হবে I
===============================
একবার প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন আমি আমাদের কোম্পানিরই একটা চা বাগানে গিয়েছিলাম I চা বাগানে প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বাগানবাসী ছেলে-মেয়েদের জন্য নানা ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করা হয়েছে I বিভিন্ন খেলাধুলার মধ্যে একটি খেলা হচ্ছে অঙ্ক দৌড় প্রতিযোগিতা I এই খেলার নিয়ম হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেনীর প্রতিযোগীদের উপযোগী দুই/তিন সারির যোগ অঙ্ক ছোট ছোট কাগজে লিখে প্রত্যেক প্রতিযোগীর হাতে দেওয়া হবে I প্রতিযোগীদের মধ্যে যে অঙ্কটি শুদ্ধ করে দৌড়ে মাঠের অপর প্রান্তে দন্ডায়মান বিচারকের কাছে পৌছতে পারবে, সে-ই হবে প্রথম, তারপর যে পৌছাবে সে দ্বিতীয় আর তারপর তৃতীয় I এ ভাবেই প্রতিযোগীদের মান নির্ণয় করে পুরস্কার বিতরণ করা হবে I
দুর্ভাগ্যত: আমি ছিলাম ওই দিনের অঙ্ক দৌড় প্রতিযোগিতার একজন বিচারক I বিচারক হিসেবে জানুয়ারী মাসের কড়া রোদের মধ্যে মাঠের অপর প্রান্তে দাড়িয়ে রয়েছি, প্রায় আধ ঘন্টা কেটে গেছে একজন প্রতিযোগীও অঙ্ক নিয়ে মাঠের ঐ প্রান্ত থেকে আর আসে না I অথচ মাঠের এ প্রান্ত থেকে স্পষ্ঠ দেখতে পাচ্ছি প্রতিযোগীরা লাইন ধরে বসে মাথা গুজে অঙ্ক কষছে I প্রায় চল্লিশ মিনিট পর দেখতে পেলাম মাত্র দুইজন অঙ্কটি দেখতে দেখতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে i প্রথম ও দ্বিতীয় দুইজনের কাছ থেকে অঙ্কের কাগজটি নিলাম, দেখলাম দুইজনের যোগই ভুল I তারপর ঝাঁকে ঝাঁকে প্রতিযোগীরা অঙ্কের কাগজ নিয়ে আমার দিকে ধেয়ে আসতে লাগলো I আমিও শৃঙ্খলার সাথে এদের কাছ থেকে ক্রমান্বয়ে কাগজগুলো নিতে থাকলাম I প্রায় ৫০ টি প্রতিযোগীর কাগজ আমার হাতে জমা হলো I কিন্তু কারো অঙ্কই শুদ্ধ নয় I সবকটি উত্তরই ভুল I
এখন সমস্যা হলো, পুরস্কার প্রদান করা হবে কিভাবে ?
অবশেষে খেলাধুলার দায়িত্বে থাকা বাগানবাবুকে ব্যাপারটি জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন-- অঙ্ক'র ব্যাপারটা ছাড়ি দেইন, যেগু দৌড়িয়া পয়লা আপনার ধারো আইছে, প্রথম পুরস্কার হিসাবে অগুর নাম, তারপরে যে আইছে দ্বিতীয় পুরস্কার হিসাবে হিগুর নাম লেখিয়া রাখৈন I
এই হচ্ছে আসামের বাগান অঞ্চলের শিক্ষা-দীক্ষার হাল i বাগান অঞ্চলের যেকোন শিক্ষার্থীকে যদি প্রশ্ন করা হয় তিন আর দুইয়ে কত ? তারা তার উত্তরে বলবে পাঁচ i কিন্তু তারপর যদি আবার বলা হয়ে দুই আরে তিনে কত ? তার উত্তরে ওরা হয় নিচের দিকে তাকাবে, নয়ত দৌড়ে পালাবে I এই হচ্ছে গ্রামাঞ্চল আর বাগান অঞ্চলের শিক্ষার মান I অথচ এসব অঞ্চলে স্কুল আর শিক্ষকের কোন অভাব নেই i প্রত্যেক বাগানেই কম বেশি ১০ টার মত বিদ্যালয় আছে, ৫০ জনের মত সরকারী বেতনভোগী শিক্ষকও আছেন, অথচ এরা কি করছেন, তা দেখার কেউ নেই I
গ্রামাঞ্চল বা বাগান অঞ্চলের যে কোন শিক্ষককে যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনাদের স্কুলের ছাত্রদের গুণগত মান কেমন ? উত্তর হলো - "না, না, ইতার মত মাতোইন না যেন, সব কয়টা গর্দভ, সেভেনও পড়ে, কিন্তু নিজর নাম লেখত পারে না I " এই বক্তব্য শুনার পর ছাত্র গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা বুঝতে কোন অসুবিধা হওয়ার কথা নয় I লেখাপড়ার মূল কাঠামো সংস্কার না করে সর্বশিক্ষার এই যে অসার ধাপাদাপি তার পরিনাম ও প্রতিক্রিয়া কিন্তু পর্বতের মূষিক প্রসবের নামান্তর হতে বাধ্য I
No comments:
Post a Comment