বছর পনেরো আগে যে যোগী সাইকেলে করে আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিক্রিকরতেন, আজ তিনি বিশাল সম্রাজ্যের মালিক। গেরুয়া বস্ত্রধারী বাবা রামদেব জড়ি বুটির ওষুধ তৈরী করে বিপুল টাকা ট্যাঁকে গুঁজে ভারত 'উদ্ধার' করতে মাঠে নেমেছেন। শুকনো পাতা বিক্রি করে বিপুল সম্পত্তি পাহারা দিতে তাঁকে রাজনেতা হতেই হবে। নইলে তাঁর সম্পত্তির ওপর শকুনের হামলা হতেই পারে।কালো টাকা নিয়ে বাবার এখন মাথায় ব্যথা হয়েছে। ২০০০ কোটি 'সাদা' টাকা নিয়ে বাবা এখন সাধু।শুধু এ দেশেই নয়, বিদেশেও রয়েছে তাঁর সম্রাজ্য। স্কটল্যান্ডের দ্বীপ, ব্রটেনের হিউস্টনের জমি সেই সম্রাজ্যের অংশ।
আগে সাইকেলে ঘুরে যোগ শেখাতেন, এখন চার্টার্ড বিমানে আসা যাওয়া করেন। বাবা রামদেব নিজেই জানিয়েছেন, তাঁর সম্পত্তি কিছুতেই ২০০০ কোটি টাকার কম নয়।
১৯৯৫'র দিকেও তিনি মেলায় মেলায় সাইকেলে ঘুরে বেড়াতেন। ২০০০ সালে জ্বালাপুরে প্রথম যোগ শিবির করেন। তাঁর দ্বিতীয় যোগ শিবির হয় কলেজ ময়দানে। তৎকালীন জেলাশাসক সে সময় মন্চে যোগ করেছিলেন।
সেই থেকে যাত্রা শুরু যোগীর। '৯৫ সালের ৫ জানিয়ারি আচার্য বালকৃষ্ণের সংগে যুক্ত হয়ে তিনি তৈরি করেন দিব্যযোগ মন্দির ট্রাস্ট।
তার প্রতিষ্ঠানে আয়োর্বেদিক চিকিৎসকদের কোন ফি নেই। তবে ওষুধ কিনতে হয় চড়া দামে। যেমনঃ
-সর্বাধিক বিক্রি হওয়া দিব্যা মুক্তির বুটির দাম ১৯০ টাকা।
- চ্যাবনপ্রাস ২০০ টাকা।
- কান্তি শ্যাম্পু ৩৫ টাকা।
- মুলতানি সাবান ২২ টাকা।
- নারকেল তেল ৪২ টাকা।
- বডি লোশন ৬০ টাকা।
- কেশর বাদাম শরবৎ ৭৫ টাকা।
- আমের শরবত ১০০ টাকা।
এখানেই আয়ুর্বেদিক সৎকর্মা ও পন্চমকর্মা চিকিৎসা হয়। সবরকমের প্যাথলজি টেস্ট হয়। রয়েছে এসি গেস্ট হাওজ। সবরকমের সুবিধা সহ লাইব্রেরি। যোগপীঠের পাশেই ঔষধিগাছ সমৃদ্ধ দিব্য হার্বাল পার্ক। এক সংগে কয়েকশো গাড়ি রাখার ব্যাবস্থা। রয়েছে অডিটোরিয়াম। সুন্দর ল্যান্ডস্কিপিং, আরো আছে ঝরনা। এ হচ্ছে ফেজ ওয়ান এর কাহিনি।
আর ফেজ-টু'র কাজ চলছে। সেখানে জমির যোগের জন্য ২ লক্ষ বর্গফুট এবং ৬০ হাজার বর্গফুট শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অডিটোরিয়াম তৈরির কাজ চলছে। ১ হাজার লোকের জন্য তৈরি হচ্ছে ধর্মশালা। ৯৫০ টি এসি ও নন এসি রুম। যোগি ও আয়ুর্বেদিক সামগ্রী বিক্রির জন্য ১১ হাজার বর্গফুট কাউন্টার করা হচ্ছে। পতন্জলি আয়ুর্বেদ কলেজ, পতন্জলি চিকিৎসালায়ের পাশাপশি যোগ ও ধ্যানের জন্য গংগার ধারে পরিবেশ বান্ধব 'যোগ গ্রাম' তৈরি করা হচ্ছে। রয়েছে দুটি গোশালা। রেয়েছে পতন্জলি আয়ুর্বেদ লিমিটেডের মতো অনেক সংস্থা। সর্বোপরি ৫০০ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা হয়েছে পতন্জলি ফুড আ্যান্ড হার্বাল পার্ক।
হরিয়ানা থেকে খালি হাতে পায়ে এসে শুধু দানের উপর ভিত্তি করেই কীকরে রামদেব আজ এত কোম্পানি ও সংস্থাসহ বিশাল সম্পত্তির মালিক হলেন তা নিয়ে ক্রমশই প্রশ্ন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই রামদেবই যখন কিছুদিন আগে সরকারকে মোকাবেলা করার জন্য সসশ্র বাহিনি গঠন করবেন বলে ঘোষনা দিলেন তাতেও কারো কোন মাথা ব্যাথা দেখা দিল না।
বাবা রামদেবের যোগ শিক্ষা এখন শিকেয় উঠেছে। তিনি বর্তমানে রাজনৈতিক দল খুলে তার 'চেয়ারম্যান' হয়ে নিজের গন্ডা কয়েক চ্যানেলে 'ভারত গড়া'র প্রবচন গেয়ে চলেছেন। আন্না হাজারে ল্যাং মেরে তাঁর আন্দোলন থেকে বাবাকে মাঠের সাইড লাইনে বসিয়ে রেখেছেন। গেরুয়া বস্ত্রধারী বাবা রামদেব জড়ি বুটির ওষুধ তৈরী করে বিপুল টাকা ট্যাঁকে গুঁজে ভারত 'উদ্ধার' করতে মাঠে নেমেছেন।
একটি হাস্যকর তথ্য,দিল্লী হাইকোর্টের রায় কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রীম কোর্টে গেলেন বাবা রামদেব। উদ্দেশ্য গে-সেক্সসুয়াল আইনটিকে সমূলে বিনাশ করা। রামদেব কোর্টে বলেছেন সমকামিতা একটি মানষিক ব্যাধি। তবে যোগা, প্রানায়ম এবং আযুর্বেদের দ্বারা এর নিরাময় সম্ভব। এই একটি হাস্যকর তথ্য,যোগ সাধনার ব্যাপারে এই অধমের যে কিঞ্চিত জ্ঞান আছে তাতে পরিস্কার, সমকামিতা যোগ প্রানায়াম দ্বারা নিরাময় সম্ভব নয়।কিছু দিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে রামদেব জানিয়েছিলেন দিব্য পুত্রজীবক বীজ'-এর বোটানিক্যাল নাম 'পুত্রনজিভা রক্সবার্ঘি', এই তথ্য হাস্যকর'।
অল্পকিছুদিন আগেই মৃত্য বরণ করলেন সাই বাবা। তার সম্পত্তির উৎপত্তিরও নেই কোন সঠিক তথ্য, তবু তিনি ছিলেন ছোটখাটো এক প্রভু। এমন হাজারো প্রভু বিস্তার পাচ্ছে এই দেশের জমিতে। এগুলোকে কী বলা হবে, কালচার? অন্ধত্ব? বিশ্বাস? পরিক্রমা?
যে যেভাবেই বলুন না কেন, আপনাকে এটা স্বীকার করতেই হবে, বাবায় বাবায় বন্দী আমাদের ভারতের জমি।
No comments:
Post a Comment